গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি রেলওয়ে স্টেশনের চিত্র। কিন্তু এখন চিত্র একেবারে উল্টো। তিস্তামুখ রেলওয়ে ফেরিঘাটটি বন্ধ হওয়ায় রেলওয়ে স্টেশনটিও দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে ওই এলাকার যাত্রী সহ হাজারো কর্মজীবী মানুষ যেমন বেকার রয়েছে, অপরদিকে রেলওয়ের প্রায় এক’শ কোটি টাকার সম্পদ দীর্ঘদিন ধরে পরে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, উনিশ শতকের প্রথমার্ধে রেল মেরিন বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়। রেলের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতে থাকে যমুনা নদীর উপর দিয়ে রেলযাত্রী ও পন্যবাহী ওয়াগন পারাপার। তৎকালীন তিস্তামুখঘাট, বাহাদুরাবাদঘাট, জগন্নাথগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ ঘাটের মধ্যে যাত্রী পারাপার ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে মেরিন বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। লর্ড বারিংটন নামক এক ইংরেজ কর্মকর্তা মেরিন বিভাগের প্রথম সুপারিনটেডেন্ট নিযুক্ত হন। ওই ইংরেজ কর্মকর্তার দক্ষ পরিচালনায় রেলওয়ের মেরিন বিভাগের সার্বিক সমৃদ্ধিসহ যাত্রী ও ওয়াগান পারাপার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নতিও ঘটে। কয়লার ইঞ্চিন চালিত স্টিমার ‘‘দরবার’’ ও প্রিন্সেস মেরী’’ সহ কয়েকটি জলযান দিয়ে যমুনায় যাত্রী ও ওয়াগন পারাপার শুরু হয়। পরে বিশ শতকের দিকে আধুনিকায়ন ঘটিয়ে কয়লার ইঞ্চিন চালিত ষ্টিমারের পরিবর্তে যমুনায় নামানো হয় ডিজেল চালিত যাত্রীবাহী স্টিমার ও ওয়াগনবাহী টাগ। ডিজেল চালিত যাত্রীবাহী দু‘টি ওয়াগনবাহী টাগগুলোর নাম দেওয়া হয় বিভিন্ন মোঘল বাদশা ও বীর যোদ্ধাদের নামে। বাহাদুর শাহ্, মির জুমলা, ঈসা খাঁ, তিতুমীর এবং বৈরাম খাঁ নামের টাগগুলো মেরিন বিভাগকে আরো সমৃদ্ধি করে তোলে।
৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় তিস্তামুখ ঘাটটি বন্ধ করে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানান্তরিত বালাসীঘাট চালুর পরপরই নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু সেতু। তখন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় এ রুটটি। তিস্তামুখ ফেরিঘাট বন্ধ ঘোষণা করায় তার সাথে এরুটের ভরতখালি রেলস্টেশনটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংযোগ বন্ধ ঘোষণা করে যাত্রী পারাপার ব্যবস্থার চূড়ান্ত ইতিটানা হলে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামীর ও যমুনার পূর্বপাড়ের জামালপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, শেরপুরের বিশাল জনগোষ্ঠী রেল যোগাযোগ সুবিধা থেকে বঞ্ছিত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি তিস্তামুখ ফেরিঘাট ও ভরতখালি স্টেশনকে কেন্দ্র করে উপার্জনশীল কুলি শ্রমিক, হোটেল ব্যবসায়ী, ফেরিওয়ালা ও কর্মচারীসহ অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। স্টেশন বন্ধ থাকায় জমজমাট বাজারের ব্যবসা আর ভালো চলেনা বলে জানালেন, ব্যবসায়ী আবু সাদাত সরকার। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ভরতখালি স্টেশন এলাকায় রেলপাত, স্টেশন ভবন, সিগনাল, বিভিন্ন স্থাপনা সহ রেলের অসংখ্য সরকারি সম্পদ পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব সম্পদ রক্ষণাবেক্ষনের জন্যও নেই কোনো ব্যবস্থা। এদিকে স্টেশনটি আবারও চালুর জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকার যাত্রীরা। স্টেশন এ্লাকার পাশের্^র সাকোয়া গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, স্টেশনটি চালু হলে একদিকে সরকারের সম্পদ গুলো রক্ষা পাবে, অপরদিকে ট্রেন চলাচল করলে যাত্রী সহ এলাকার বড় জনগোষ্ঠির উপকার হবে। বোনারপাড়া রেলওয়ে উর্দ্ধোতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী (পথ) আকবর হোসেন জানান, এলাকার লোকজন অবশ্য দাবি জানিয়ে আসছে। আসলে এ বিষয়টি মিনিষ্ট্রি পর্যায়ের।